গুরুগ্রামে নাম করা একটি বেসরকারি হাসপাতালের ভেন্টিলেশনে থাকা রোগীকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ঘিরে তোলপাড়। এই ঘটনায় ২৫ বছরের এক হাসপাতাল কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে আইসিইউতে ভেন্টিলেটরে থাকা এক ৪৬ বছরের বিমানসেবিকাকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ। আইনি পরিভাষায়, এই যৌন হেনস্থাকে ডিজিটাল রেপের ক্যাটিগরিতে ফেলা হয়েছে। এর পর থেকেই হাসপাতালে রোগীদের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। আইনের চোখে যৌন নিগ্রহের ব্যাখ্যা নিয়েও প্রশ্ন করছেন কেউ কেউ।
ঠিক কী ঘটেছিল গুরুগ্রামের হাসপাতালে?
গুরুগ্রাম পুলিশ জানিয়েছে, দীপক নামে অভিযুক্ত ব্যক্তি বিহারের মুজফফরপুরের বাসিন্দা। আইসিইউতে কাজ করছিলেন তিনি। আঙুলের ব্যবহার করে আইসিইউতে থাকা অচেতন রোগীকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। জানা গিয়েছে, আইসিইউতে দুই নার্সের উপস্থিতিতেই এই যৌন নিগ্রহের ঘটনা ঘটে। জ্ঞান ফেরার পর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান নির্যাতিতা। তার পর গত ১৪ এপ্রিল তিনি পুলিশে অভিযোগ দায়ের করলে ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে।
তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে শুক্রবার পুলিশ গ্রেপ্তার করে হাসপাতাল কর্মী দীপককে। প্রায় ৮০০ সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা এবং ৫০ জন হাসপাতাল কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তদন্তে। পুলিশ সূত্রে খবর, অপরাধের আগে এবং পরে অভিযুক্ত কী কী করেছেন, কাদের কাদের সঙ্গে কথা বলেছে, তাঁর গতিবিধি জানতে মোবাইল খতিয়ে দেখা হয়েছে। মোবাইলের সার্চ হিস্ট্রিতে বেশ কিছু পর্নোগ্রাফির ভিডিয়োর লিঙ্ক মিলেছে, যা থেকে অভিযুক্তের মানসিক অবস্থারও আভাস পাওয়া গিয়েছে।
কী এই ডিজিটাল রেপ?
ডিজিটাল শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ ডিজিটাস থেকে, যার অর্থ আঙুল। কোনও মহিলার অজান্তে তাঁর যোনিতে হাত কিংবা পায়ের আঙুল প্রবেশ করানো হলে সেটিকে আইনি পরিভাষায় ডিজিটাল রেপের সংজ্ঞা দেওয়া হয়। এ খানে ডিজিটাল শব্দের অর্থ প্রযুক্তিগত নয়। ডিজিটালের অর্থ এ ক্ষেত্রে হাত এবং পায়ের আঙুলের সংখ্যাকে বোঝানো হচ্ছে। ভারতে আইনের চোখে এই অপরাধ ঘৃণ্য এবং গুরুতর। সর্বোপরি ধর্ষণের সমতুল্য। এই অপরাধ প্রমাণিত হলে, দোষীর সাজাও ধর্ষণের সমতুল্যই হয়।
কেন ডিজিটাল রেপ গুরুতর অপরাধ?
যৌন নিগ্রহের ক্ষেত্রে বাহ্যিক বলপ্রয়োগ হয়। ডিজিটাল রেপের ক্ষেত্রে নির্যাতিতার অচেতন অবস্থায় থাকার সময়ে, তাঁর অজান্তেই আক্রমণাত্মক অনুপ্রবেশের চেষ্টা হয়। শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশিই ডিজিটাল রেপের শিকার অনেকেই পরবর্তীতে মানসিক ট্রমা ভোগ করেন। ভেন্টিলেটর সাপোর্টে থাকাকালীন ওই বিমানসেবিকার সঙ্গে হওয়া ঘটনাও গুরুতর এবং ডিজিটাল রেপের আওতায় পড়ছে। এই ঘটনা প্রকাশ্যে এলেও অনেক সময়েই দেখা গিয়েছে, সচেতনতা এবং সামাজিক লজ্জার ভয়ে হাসপাতাল, হোম, পুলিশি হেফাজতে ঘটা এই ধরনের একাধিক ঘটনার রিপোর্ট দায়ের হয় না।
২০২১ সালের দিল্লির ঘটনা
২০২১ সালে দিল্লিতে এক ব্যক্তির ২৫ বছরের কারাবাসের সাজা হয়েছিল দু’বছরের এক শিশুকে ডিজিটাল রেপ করার অপরাধে। আদালত জানিয়েছিল, আঙুল কিংবা বস্তুর ব্যবহার করে সংঘটিত এই ঘৃণ্য অপরাধ গুরুতর।
২০১২ সালের ধর্ষণের ঘটনা
২০১২ সালের দিল্লিতে প্যারা মেডিক্যাল ছাত্রীর ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার পর থেকে ডিজিটাল রেপ শব্দবন্ধ আইনি প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়।