পদ্মা সেতুতে চালু হলো ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন (ইটিসি) ব্যবস্থা। এই পদ্ধতিতে প্রথমবারের মতো দেশের কোনো সেতুতে গাড়ি থামানো ছাড়াই টোল পরিশোধ করে পারাপারের সুযোগ তৈরি হলো। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টা ১৩ মিনিটে প্রথম একটি গাড়ি এই নতুন সিস্টেম ব্যবহার করে সেতু পার হয়, যার মাধ্যমে লাইভ পাইলটিং আকারে ইটিসির সূচনা ঘটে।
সেতুর মাওয়া প্রান্তে দুটি এবং জাজিরা প্রান্তে আরও দুটি, মোট চারটি নতুন ইলেকট্রনিক টোল বুথ বসানো হয়েছে। আগের মতোই বাকি ১১টি বুথ চালু থাকবে ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে। যদিও এই সিস্টেম চালু হওয়ার কথা ছিল দুপুর ২টায়, তবে কিছু টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে তা সম্ভব হয়নি। দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি শেষে অবশেষে বিকেলে তা চালু করা সম্ভব হয়।
যেসব ব্যবহারকারী ইটিসি সেবা নিতে চান, তাদের জন্য রয়েছে একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া। প্রথমবারের মতো ট্রাস্ট অ্যান্ড পে অ্যাপ ডাউনলোড করে গাড়ির নিবন্ধন ও রিচার্জ করতে হবে। এরপর পদ্মা সেতুর ওয়েট স্কেলের পাশে অবস্থিত আরএফআইডি বুথে গিয়ে গাড়ির আরএফআইডি ট্যাগ পরীক্ষা ও নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। এই নিবন্ধনের পর গাড়িচালকরা অন্তত ৩০ কিলোমিটার গতিতে নির্ধারিত ইটিসি লেন ব্যবহার করে সরাসরি সেতু পার হতে পারবেন, যেখানে টোল স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হবে।
এই প্রযুক্তি রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন বা আরএফআইডি ভিত্তিক। ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট থেকে নির্ধারিত হারে টোল কেটে নেওয়া হবে এবং গাড়ি থামানোর প্রয়োজন হবে না। প্রথমবারের নিবন্ধন কার্যক্রম সোমবার পদ্মা সেতু উত্তর থানার সামনে পরিচালনা করা হয়। সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আপাতত কেবল টেপ অ্যাপের মাধ্যমেই নিবন্ধন ও রিচার্জ করা যাবে, তবে ভবিষ্যতে অন্যান্য ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাপকেও এই সেবার সঙ্গে যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে কাজ করছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের এটুআই।
২০২৩ সালের জুলাইয়ে পরীক্ষামূলকভাবে এই প্রযুক্তি চালু হয়। তখন ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল তিন মাসের মধ্যে এটি উন্মুক্ত করা হবে, তবে বাস্তবে অপেক্ষা করতে হয়েছে দুই বছরের বেশি সময়। এ সময়ে পদ্মা সেতুর ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। প্রায়ই টোল প্লাজায় দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়, বিশেষ করে ঈদ বা উৎসবের সময়। অনেক সময় গাড়িকে লাইনে দাঁড়াতে হয়, যার ফলে যাত্রীদের সময় নষ্ট হয় এবং দুর্ভোগ বাড়ে। ইটিসি চালুর মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ।
সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে এই উদ্যোগ ঘিরে দেখা দিয়েছে ইতিবাচক সাড়া। শরীয়তপুরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, তিনি প্রায়ই ঢাকায় যাতায়াত করেন এবং আগে টোল দেওয়ার জন্য গাড়ি থামিয়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হতো। ইলেকট্রনিক টোল চালু হলে সময় বাঁচবে এবং ঝামেলা কমবে। একই অনুভূতি প্রকাশ করেছেন মাদারীপুরের শিক্ষক বসির উদ্দিন। তার মতে, এই ব্যবস্থার ফলে বিশেষ করে উৎসবের সময় ভিড়ের কারণে দেরি করে গন্তব্যে পৌঁছানোর যে সমস্যা ছিল, তা অনেকটাই কমে আসবে।