আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, সত্যিকারের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকার আইন ও বিচার সম্পর্কিত যে পরিবর্তন করেছে তা পরবর্তী সরকার ধরে রাখলে দেশের সাধারণ মানুষ ন্যায়বিচার পাবে। তিনি বলেন, আমরা প্রায়ই শুনি– আপনি কী করেছেন? আমি কী করছি, তা আমার কাজের মধ্য দিয়ে দেখতে পারবেন। আমি অনেক কাজ করেছি, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে আগে কোনো দিনও হয়নি।
বুধবার বিকেলে সিলেটের একটি হোটেলে লিগ্যাল এইডবিষয়ক পাইলট প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আইন উপদেষ্টা বলেন, নতুন এই ব্যবস্থায় অনেক বিরোধ মামলা ছাড়াই কম সময় ও কম খরচে সমাধান হবে। এখন থেকে মামলা করার আগে বাধ্যতামূলকভাবে মামলাপূর্ব মধ্যস্থতার দারস্থ হতে হবে। প্রয়োজনে পরে আদালতে মামলা করা যাবে।
আসিফ নজরুল বলেন, আমরা সিভিল আদালত, ক্রিমিনাল আদালতকে আলাদা করেছি, যাতে সিভিল আদালতে মামলার নিষ্পত্তি বাড়ে ও দ্রুতগামী হয়। এটা বাংলাদেশে আগে করা হয়নি। মামলার জট কমাতে মধ্যস্থতা বাধ্যতামূলক কার্যক্রম চালুর উদ্যোগকে ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে দরিদ্র মানুষের জন্য অপূর্ব সুযোগ উল্লেখ করে আসিফ নজরুল বলেন, সুনির্দিষ্ট ১১ ধরনের আইনের জন্য মামলা দায়েরের আগে লিগ্যাল এইডে যাওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সেখানে সমাধান না হলে আদালতে যেতে কোনো বাধা থাকবে না।
এছাড়া আগে লিগ্যাল এইডের দায়িত্বে থাকতেন একজন সিনিয়র সহকারী জজ। এখন থেকে এই দায়িত্বে থাকবেন সিনিয়র যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ এবং একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ। অল্প সম্মানী নিয়েও অবসরপ্রাপ্ত বিচারকরা এই প্রজেক্টে অংশ নিয়েছেন বলে তাদেরকে ধন্যবাদ জানান উপদেষ্টা।
মামলার জট কমানো ও মানুষের ভোগান্তি কমানোর লক্ষ্য তুলে ধরে আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের বিশ্বাস এটি ঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে মামলার জট অনেকটাই কমবে। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পারিবারিক বিরোধ, পিতা-মাতার ভরণপোষণ, বাড়ি ভাড়া, যৌতুকসহ ৮টি আইনে মামলা দায়েরের পূর্বে বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতা বিধান কার্যকর হচ্ছে।
আইন সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ (২০২৫ সনের ৩৫ নং অধ্যাদেশ) এর ধারা ১ এর উপ-ধারা (২) এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে পাইলট প্রকল্প হিসাবে আজ বৃহস্পতিবার থেকে সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, রংপুর, দিনাজপুর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, কুমিল্লা, নোয়াখালী, রাঙামাটি জেলায় এই কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে বিচার ব্যবস্থায় এক নব অধ্যায়ের সূচনা হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।