৭ ডিসেম্বর ২০২৫ রবিবার
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৯:৩৯ পিএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

সরকারির চেয়ে বেশি অর্থ আদায়, দুদকের জালে ১০১ রিক্রুটিং এজেন্সি!

প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৯:৩৯ পিএম

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে সরকারি খরচ মাত্র ৭৯ হাজার টাকা হলেও রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো প্রায় ৫ লাখ টাকা আদায় করছে। এমন কায়দায় হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১০১টি এজেন্সি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জালে ধরা পড়েছে। এর মধ্যে ২৫টি এজেন্সির বিরুদ্ধে ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এজেন্সিগুলো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সিন্ডিকেট ভাঙতে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

দেশে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের পথচলা শুরুই হয় সিন্ডিকেটের প্রতারণার শিকার হওয়ার মধ্যদিয়ে। মালয়েশিয়ায় যেতে সরকারি খরচ মাত্র ৭৯ হাজার টাকা হলেও দালাল ও এজেন্সিগুলো মিলে সাড়ে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা আদায় করছে। বহু বছর ধরে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ করা এই খেলায় জড়িত সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে এখন ব্যবস্থা নিচ্ছে দুদক।

সংস্থার নিয়ন্ত্রণে থাকা ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে গড়ে ওঠা ১০১টি রিক্রুটিং এজেন্সির হাজার হাজার কোটি টাকার জালিয়াতির নথিপত্র যাচাই-বাছাই করছে দুদক। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতিও চলছে। এরইমধ্যে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের উত্তরসূরি মোস্তফা কামাল, সাবেক এমপি নিজাম হাজারী ও সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মালিকানাধীন ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

এ ছাড়া ৬৪ আসামির বিরুদ্ধে আনা হয়েছে ২ হাজার ২২৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ। দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, ‘বিভিন্ন এজেন্সি পাসপোর্ট, স্বাস্থ্য পরীক্ষা কিংবা অন্য অজুহাত দেখিয়ে কর্মীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেছে।’

দুর্নীতিবিরোধী জাতীয় সমন্বয় কমিটির এক নেতার অভিযোগ, বিদেশগামী শ্রমিকরা এজেন্সি ও সরকারি কর্মকর্তাদের চক্রের কারণে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন। দুর্নীতিবিরোধী জাতীয় সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. শাহজাহান সাজু বলেন, মাঝখানে যে প্রান্তিক মানুষগুলো আছে তারা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, মরে যাচ্ছে। পরিবারগুলোর যা সামান্য জমি ছিল সেটাও বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। দেশে ফেরার সময় তারা নিঃস্ব হয়ে ফিরে আসছে। যদি ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো মনিটরিংয়ের আওতায় থাকে এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সক্রিয়ভাবে নজরদারি চালায়, তবে এ ধরনের প্রতারণা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এ ধরনের সিন্ডিকেট সক্রিয় থাকলে দেশের শ্রমবাজার মারাত্মক সংকটে পড়বে। ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির কেস ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ আল আমিন নয়ন বলেন, দৃষ্টান্তমূলক কোনো ব্যবস্থা এখনও কোনো রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে নিতে পারেনি মন্ত্রণালয় বা অধিদফতর। অথচ সৌদি আরবে যেতে বৈধ খরচ ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা হলেও মানুষ ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা খরচ করে যাচ্ছে। এটা সবাই জানে। কিন্তু প্রতিকার না করলে বা দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে, কোনোভাবেই এই প্রবণতা রোধ করা সম্ভব নয়। দুদক বলছে, প্রয়োজন হলে প্রতারণার সঙ্গে জড়িত এজেন্সি ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দেশে যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং গ্রেফতারের মতো পদক্ষেপও নেয়া হবে।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x