আফগানিস্তানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচি থেকে নারীদের লেখা বই সরিয়ে দিয়েছে তালেবান সরকার। মানবাধিকার ও যৌন হয়রানিবিষয়ক পাঠদানের ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বিবিসি জানায়, শরিয়াহ্বিরোধী ও তালেবান নীতির পরিপন্থি’ বলে চিহ্নিত করা ওই তালিকায় মোট বইয়ের সংখ্যা ৬৮০টি।
এর মধ্যে নারীদের লেখা প্রায় ১৪০টি বই নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে সেফটি ইন দ্য কেমিক্যাল ল্যাবরেটরি মতো শিরোনামের বইও। এ ছাড়া আরও ১৮টি বিষয় আর পড়ানো যাবে না বলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টিই নারীদের নিয়ে, যেমন ‘জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’, ‘দ্য রোল অব উইমেন ইন কমিউনিকেশন’ ও ‘উইমেনস সোসিওলজি’।
তালেবানের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এসব বিষয় ‘শরিয়াহ্ ও কাঠামোর নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক’। চার বছর আগে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে একের পর এক জারি করা বিধিনিষেধের নতুন সংযোজন এটি। সম্প্রতি তালেবানের সর্বোচ্চ নেতার নির্দেশে দেশটির অন্তত ১০টি প্রদেশে ফাইবার অপটিক ইন্টারনেট নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, অনৈতিক কর্মকাণ্ড রোধের জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই বিধিনিষেধ আফগান জীবনের নানা ক্ষেত্রে প্রভাব ফেললেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন নারীরা। ষষ্ঠ শ্রেণির পর থেকে তাদের শিক্ষা গ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, আর ২০২৪ সালের শেষ দিকে ধাত্রীবিদ্যা কোর্স বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পেশাগত প্রশিক্ষণের শেষ সুযোগটিও হারিয়েছে তারা। তালেবান সরকার বলছে, আফগান সংস্কৃতি ও শরিয়াহ্র ব্যাখ্যা অনুযায়ী তারা নারী অধিকারকে সম্মান করে।
বইগুলো পর্যালোচনার দায়িত্বে থাকা কমিটির এক সদস্য বিবিসি আফগানকে নিশ্চিত করেছেন, নারীদের লেখা সব বই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, নারীদের লেখা কোনো বই পড়ানো যাবে না। এ ছাড়া নারীদের বইয়ের পাশাপাশি ইরানি লেখক ও প্রকাশকদের বইও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বই পর্যালোচনা কমিটির এক সদস্য বিবিসিকে বলেন, এর উদ্দেশ্য হলো, আফগান পাঠ্যসূচিতে ইরানি বিষয়ের অনুপ্রবেশ ঠেকানো। আফগানিস্তানের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো ৫০ পৃষ্ঠার তালিকায় ৬৭৯টি বইয়ের নাম রয়েছে। এর মধ্যে ৩১০টি বই হয় ইরানি লেখকদের লেখা, নয়তো ইরানে প্রকাশিত।