সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি এবং যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি ও সাবেক সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিককে বলতে শোনা যায়, আমি বাংলাদেশি নই, আমি একজন ব্রিটিশ এমপি।
ভিডিওটি দেখে মনে করা হচ্ছে, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং তার খালা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছে। সেখানে তিনি কিছুটা বিরক্ত হয়ে প্রশ্নকর্তাকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, সতর্ক হোন। এসব ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। ভিডিওটি প্রচার করে তার ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ..দেশের টাকা পয়সা সব লুটে খেয়ে এখন দেশকে অস্বীকার করছে।
যদিও রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধান বলছে, টিউলিপ সিদ্দিকের করা আমি বাংলাদেশি নই শীর্ষক মন্তব্যটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। এটি ২০১৭ সালে ব্যারিস্টার আহমেদ বিন কাসেম সম্পর্কে সাংবাদিকের করা প্রশ্নের জবাব। যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম Channel 4 News এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৭ সালের ২৯ নভেম্বর Tulip Siddiq: MP quizzed over abducted man in Bangladesh শীর্ষক ক্যাপশনে প্রচারিত সংবাদ প্রতিবেদনের ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।
যদিও বিভিন্ন সময় ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে দেখা গেছে টিউলিপ সিদ্দিককে। তবে তথ্য-উপাত্ত ও সরকারি নথি বলছে, তিনি বাংলাদেশি নাগরিক। তার নামে জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট এমনকি কর শনাক্তকরণ নম্বরও (টিআইএন) রয়েছে। জমা দিয়েছেন আয়কর রিটার্নও। সব প্রমাণপত্র বলছে, টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশি নাগরিক ও ভোটার
ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওটির সূত্র ধরে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, টিউলিপ সিদ্দিক আসলেই কি বাংলাদেশের নাগরিক, তিনি কখনও বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করেছেন? যদিও বিভিন্ন সময় ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে দেখা গেছে টিউলিপ সিদ্দিককে। তবে তথ্য-উপাত্ত ও সরকারি নথি বলছে, তিনি বাংলাদেশি নাগরিক। তার নামে জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট এমনকি কর শনাক্তকরণ নম্বরও (টিআইএন) রয়েছে। জমা দিয়েছেন আয়কর রিটার্নও। সব প্রমাণপত্র বলছে, টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশি নাগরিক ও ভোটার।
দুদক সূত্রে পাওয়া তথ্য বলছে, টিউলিপ সিদ্দিকের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর- ৫০৬৬…..৮। এটি ২০১১ সালের ৩ জানুয়ারি ইস্যু করা হয়েছিল এবং এখনও সক্রিয়। বাতিল বা জমা দেওয়া হয়নি। এনআইডি অনুসারে তার নাম টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক (TULIP RIZWANA SIDDIQ)। বাবার নাম- শফিক আহমেদ সিদ্দিক এবং মাতার নাম- রেহানা সিদ্দিক। জন্ম তারিখ- ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৮২। রক্তের গ্রুপ- বি (+) পজিটিভ। ঠিকানা লেখা রয়েছে- বাসা/হোল্ডিং : ৫৪, গ্রাম/রাস্তা- ০৫, ধানমন্ডি আ/এ, ডাকঘর : নিউমার্কেট- ১২০৫, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা। অর্থাৎ এটি সুধা সদনের হোল্ডিং নম্বর।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ২০২৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালকের নির্দেশে টিউলিপ সিদ্দিক, তার খালা শেখ হাসিনাসহ পরিবারের ১০ সদস্যের এনআইডি লক করে দেওয়া হয়। শুধু এনআইডি নয়, টিউলিপ সিদ্দিক নির্বাচন কমিশনের তালিকাভুক্ত ভোটারও বটে। ২০২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বরের হালনাগাদ তথ্যানুসারে তার ভোটার নম্বর- ২৬১৩…….৯। তিনি ঢাকার ভোটার।
অন্যদিকে, তার বাংলাদেশি প্রথম পাসপোর্ট নম্বর- কিউ …..৯৯ (Q …..99)। ২০০১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ইস্যু হওয়া প্রথম পাসপোর্টে জন্মস্থান ও পাসপোর্ট প্রদানের স্থানে লন্ডন, ইউকে (যুক্তরাজ্য) উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ লন্ডনে থাকা অবস্থায় পাসপোর্টটি করা হয়। যেখানে উচ্চতা- পাঁচ ফিট, পেশা- শিক্ষার্থী, নাম- রিজওয়ানা সিদ্দিক, বাবা- ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিক এবং মাতার নাম- রেহানা সিদ্দিক উল্লেখ আছে। ওই পাসপোর্টের মেয়াদ ২০০৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর শেষ হয়েছে।
পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হলে দ্বিতীয় দফায় নবায়নের জন্য ২০১১ সালে আবেদন করা হয়। সেই পাসপোর্টের নম্বর হলো- এএ ……৪ (AA ……4)। এটি ইস্যু করা হয় ২০১১ সালের ৩ জানুয়ারি। মেয়াদ শেষ হয় ২০১৬ সালের ২ জানুয়ারি। পাসপোর্ট টাইপ ছিল অর্ডিনারি (ORDINARY) এবং পাসপোর্ট প্রদানের স্থান ছিল আগারগাঁও। অর্থাৎ বাংলাদেশে বসেই পাসপোর্টটি নেওয়া হয়েছে। সেখানে ইমারজেন্সি কন্টাক্ট পারসন হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা তারেক আহমেদ সিদ্দিকের নাম ও ঠিকানা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশি করদাতা হিসেবেও নিবন্ধন নিয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি ২০০৭-০৮ করবর্ষ থেকে বাংলাদেশি করদাতা হিসেবে নিবন্ধন নিয়েছেন বলে জানা গেছে। তার কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) হলো- ১৮৩………..৪। তিনি আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন বলেও এনবিআরের ঊর্ধ্বতন নিশ্চিত করেছেন।