খাগড়াছড়িতে মারমা শিক্ষার্থীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। দুদিন সড়ক অবরোধ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে জেলাজুড়ে। রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) তিনজন নিহতসহ ১৩ সেনা সদস্য আহত হয়েছেন। তবে জেলাজুড়ে ঘোষিত ১৪৪ ধারা জারি বলবৎ রয়েছে। সাত প্লাটুন বিজিবি জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে মোতায়েন রয়েছে। তৎপর সেনাবাহিনী।
কালে থেকে খাগড়াছড়ি পৌর শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মোতায়েন ছিল সেনাবাহিনী ও পুলিশ। এছাড়াও খাগড়াছড়িতে জেলা সদরে মোতায়েন করা হয়েছে সাত প্লাটুন বিজিবি। সকাল থেকে বিভিন্ন পয়েন্টে চলাচলকারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এদিকে বন্ধ রয়েছে শহরের দোকানপাট। সকাল থেকে জেলার কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া না গেলেও ১৪৪ ধারার মধ্যে দুপুর থেকে গুইমারায় তাণ্ডব চালিয়েছে আবরোধকারীরা।
এর আগে শনিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নতুন করে অনির্দিষ্টকালের সড়ক অবরোধের ডাক দেওয়া হলেও পরে সেটি প্রত্যাহারের কথা জানানো হয়। কিছুক্ষণ পর ফের অবরোধ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা আসে। অবরোধের ফলে খাগড়াছড়ি জেলা থেকে দূরপাল্লার যাত্রী ও পণ্যবাহী যান ছেড়ে যায়নি। একই সঙ্গে বন্ধ রয়েছে জেলার আভ্যন্তরীণ সড়কের যান চলাচল। এদিকে দুপুর ১২টার দিকে খাগড়াছড়ি মাটিরাঙা সড়কে সেগুন বাগান এলাকায় একটি মোটর সাইকেল জ্বালিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ অবরোধ সমর্থকরা।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) জুম্ম ছাত্র-জনতার ডাকা সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ চলাকালে খাগড়াছড়ির মহাজন পাড়া ও সদর উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় দুপক্ষের মুখোমুখি অবস্থান তৈরি হয়। দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত হন অন্তত ২৩ জন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণসহ জানমাল রক্ষায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেছে জেলা প্রশাসন।
খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন মো. ছাবের বলেন, দুই পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় অন্তত ২৩ জন আহত হয়। এদের মধ্যে ২১ জন প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে গেছে। দুজন খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, শনিবার দুপুরে উপজেলা ইউএনও সংলগ্ন এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। পরে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ নিরাপত্তায় যৌথভাবে কাজ করছে। পরে সাউন্ড গ্রেনেড দিয়ে উত্তেজিত দুই পক্ষকে আমরা সরিয়ে দিই। নতুন করে যাতে সহিংসতার ঘটনা না ঘটে সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এর আগে মঙ্গলবার খাগড়াছড়ি সদরের সিঙ্গিনালায় এক স্কুলছাত্রী ধর্ষণের শিকার হন। ভুক্তভোগীর বাবা অজ্ঞাত তিনজনকে আসামি করে সদর থানায় মামলা করেন। পরদিন সেনাবাহিনীর সহায়তায় সন্দেহভাজন যুবক শয়ন শীলকে (১৯) আটক করে পুলিশ। তাকে ছয় দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।