২৭ অক্টোবর ২০২৫ সোমবার
প্রকাশ : ১০ অক্টোবর ২০২৫, ১:০৭ এএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

এবার ট্রাম্প কি নোবেল পুরস্কার পাবেন, যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

প্রকাশ : ১০ অক্টোবর ২০২৫, ১:০৭ এএম

ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো নোবেল পুরস্কার পাওয়ার জন্য এত তৎপরতা ইতিহাসে আর কেউ দেখাননি। প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েই তিনি নোবেল পুরস্কারের ওপর নজর দিয়েছেন। এর আগে ইসরায়েল-ইরান ও ভারত–পাকিস্তান সংঘাত বন্ধের জন্য কৃতিত্ব দাবি করে নোবেল পাওয়ার জন্য শোরগোল তোলেন ট্রাম্প। এর মধ্যে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে আমন্ত্রণ করে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে বেশ ভালো আপ্যায়ন করেন তিনি। এরপর পাকিস্তান তাঁর নোবেলের পক্ষে প্রকাশ্যে ওকালতি করে। গত মাসে জাতিসংঘ অধিবেশনে ট্রাম্প বলেন, সবাই বলে আমি নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য।

নোবেল পুরস্কারের নিয়ম অনুযায়ী, কেউ নিজেকে এর জন্য মনোনয়ন দিতে পারেন না। তবে ট্রাম্পের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য ও কিছু মনোনয়ন তাঁকে বুকমেকারদের তালিকায় শীর্ষে রেখেছে। এখন নরওয়ের পার্লামেন্ট কর্তৃক নিয়োজিত পাঁচ সদস্যের নোবেল কমিটির রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তাঁর নাম আসলেই আসে কি না, তা দেখার বিষয়।

নরওয়ের নোবেল কমিটি সাধারণত এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকেই গুরুত্ব দেয়, যারা দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখে। শান্তি প্রতিষ্ঠায় ট্রাম্পের কিছু উদ্যোগ ও কয়েকটি আলোচিত মনোনয়নের পরও ট্রাম্পের এই পুরস্কার জেতার সম্ভাবনা বাস্তবে অনেক কম বলে মনে করছেন নোবেল পুরস্কার পর্যবেক্ষকেরা। ইউএসএআইডিসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতি ট্রাম্পের বিরূপ মনোভাব ও জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে উদাসীনতা তাঁর বিপক্ষে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

২০১৮ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের রাজনীতিবিদেরা ট্রাম্পকে একাধিকবার মনোনয়ন দিয়েছেন। গত ডিসেম্বরে মার্কিন রিপাবলিকান কংগ্রেসওম্যান ক্লাউডিয়া টেনি ট্রাম্পকে মনোনয়ন দেন—ইসরায়েল ও কয়েকটি আরব দেশের সঙ্গে ২০২০ সালে ‘আব্রাহাম চুক্তি’ সম্পাদনের জন্য। এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও পাকিস্তান সরকারের করা মনোনয়ন ২০২৫ সালের পুরস্কারের নির্ধারিত সময়সীমা (১ ফেব্রুয়ারি) পার হওয়ার পর জমা পড়েছে।

ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি ‘সাতটি যুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছেন’ এবং গাজা যুদ্ধের শান্তি পরিকল্পনা সফল হলে অষ্টম যুদ্ধও থামাতে পারবেন। গত সপ্তাহে ভার্জিনিয়ার মেরিন কর্পস ঘাঁটিতে সামরিক কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি যদি যুদ্ধ থামাই, তারা কি আমাকে নোবেল দেবে? একদমই না। তারা সেই পুরস্কার দেবে এমন কাউকে, যে কিছুই করেনি।’

এদিকে গাজা নিয়ে ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হামাস প্রথম ধাপে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে এবং বন্দিবিনিময়ের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ ঘটনার পর আজ বৃহস্পতিবার সকালে তেল আবিবের হোস্টেজ স্কয়ারে জড়ো হওয়া কয়েকটি পরিবারের সদস্য ও সমর্থকেরা স্লোগান দেন—‘ট্রাম্পের হাতে নোবেল পুরস্কার দাও’।

তবে নোবেল বিশ্লেষকেরা বলছেন, কমিটি সব সময় স্থায়ী ও বহুপক্ষীয় শান্তি প্রচেষ্টাকে অগ্রাধিকার দেয়, তাৎক্ষণিক কূটনৈতিক সাফল্য নয়। হেনরি জ্যাকসন সোসাইটির গবেষক থিও জেনু বলেন, সাময়িকভাবে যুদ্ধ থামানো আর সংঘাতের মূল কারণ সমাধান করা—এ দুয়ের মধ্যে বিশাল পার্থক্য রয়েছে।

থিও জেনু আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ট্রাম্পের অবজ্ঞাপূর্ণ অবস্থানও তাঁকে নোবেল কমিটির কাছে অপ্রিয় করে তুলতে পারে। থিও জেনু বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কার এমন কাউকে দেওয়া হবে না, যে জলবায়ু পরিবর্তনকেই বিশ্বাস করেন না। তিনি আরও বলেন, ‘আগের বিজয়ীদের দিকে তাকান—তাঁরা সবাই শান্তি প্রতিষ্ঠায় সেতুবন্ধন তৈরি করেছেন, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও পুনর্মিলনের প্রতীক হয়েছেন। এই শব্দগুলো ট্রাম্পের সঙ্গে যায় না।’

২০০৯ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে ক্ষমতায় আসার মাত্র নয় মাসের মাথায় নোবেল দেওয়ার পর কমিটি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। অনেকে বলেছিলেন, ওবামা তখনো এমন কোনো বাস্তব কৃতিত্ব অর্জন করেননি, যা নোবেলের যোগ্য।

পিচ রিসার্চ ইনস্টিটিউট অসলোর পরিচালক নিনা গ্রেগার বলেন, ট্রাম্পের প্রকাশ্য বক্তব্য ও পুরস্কারের জন্য তাঁর আগ্রহ কমিটিকে প্রভাবিত করতে পারে। তবে নোবেল কমিটি নিশ্চয়ই বিষয়টি এড়িয়ে যাবে। তাঁর মতে, এই বছর ট্রাম্পের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তাঁর বক্তব্য ও আচরণ কোনোভাবেই শান্তির প্রতিফলন ঘটায় না।

উল্লেখ্য, গত সোমবার চিকিৎসাবিজ্ঞানে, মঙ্গলবার পদার্থবিজ্ঞানে ও গতকাল বুধবার রসায়নে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। আজ সাহিত্যেও নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। আগামীকাল শান্তিতে ও আগামী সোমবার অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ীর নাম জানা যাবে।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x