৭ ডিসেম্বর ২০২৫ রবিবার
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৪৬ পিএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

‘তিন-শূন্য বিশ্ব’ গঠনই বিশ্ব বাঁচানোর একমাত্র পথ: রোমে প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৪৬ পিএম

ব্যক্তিগত মুনাফাহীন এক নতুন ব্যবসা-ধারা সামাজিক ব্যবসা—গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘তিন-শূন্য বিশ্ব’ গঠন কোনো স্বপ্ন নয়, বরং এটি একান্ত প্রয়োজন—বিশ্বকে রক্ষা করার একমাত্র পথ’। রোববার বিকেলে ইতালির রাজধানী রোমে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সদর দপ্তরে আয়োজিত বিশ্ব খাদ্য ফোরামের (ডব্লিউএফএফ) ২০২৫ সালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মূল বক্তা হিসেবে তিনি এই আহ্বান জানান।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো একটি ‘তিন-শূন্য বিশ্ব’ গঠন করা—যেখানে সম্পদুকেন্দ্রীকরণ শূন্য হবে (অর্থাৎ দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব), বেকারত্ব শূন্য হবে (প্রত্যেকে উদ্যোক্তা হবে) এবং কার্বন নিঃসরণ থাকবে শূন্য। এটি কোনো কল্পনা নয়—এটি বাস্তব প্রয়োজন, পৃথিবী বাঁচানোর একমাত্র উপায়।’ তিনি বলেন, ‘ক্ষুধা কোনো অভাবের কারণে সৃষ্টি হয়নি, বরং বর্তমান অর্থনৈতিক কাঠামোর ব্যর্থতার ফল। তাই আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তন আনতে হবে। পুরোনো মুনাফাভিত্তিক ব্যবসা ব্যবস্থা কোটি কোটি মানুষকে পিছিয়ে দিয়েছে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এখন সময় এসেছে এমন এক নতুন ব্যবসা কাঠামো গড়ে তোলার—যা সমস্যার সৃষ্টি করে না, বরং সমস্যার সমাধান করে। এই মডেল হলো সামাজিক ব্যবসা—যা ব্যক্তিগত লাভের জন্য নয়, মানবকল্যাণের জন্য। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা এর কার্যকারিতা দেখেছি। গ্রামীণ ব্যাংক দেখিয়েছে, দরিদ্র নারীরাও হতে পারেন শক্তিশালী উদ্যোক্তা। গ্রামীণ দানোন শিশু অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়ছে। এ রকম অসংখ্য সামাজিক ব্যবসা এখন বিশ্বজুড়ে গড়ে উঠছে এবং মানুষকে ক্ষমতায়ন করছে। এগুলো তত্ত্ব নয়, বাস্তব উদাহরণ।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তরুণ উদ্যোক্তা, নারী, কৃষক, কৃষিুব্যবসায়ী ও প্রযুক্তিুউদ্ভাবকদের সহায়তায় সামাজিক ব্যবসা তহবিল গঠন করতে হবে। এই ধরনের উদ্যোগের জন্য আইনি ও আর্থিক কাঠামো তৈরি করতে হবে—যা উদ্যোক্তাদের প্রতিবন্ধক না হয়ে সহায়ক হবে।

তরুণদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, আজকের তরুণ প্রজন্ম আগের প্রজন্মের মতো নয়। তারা সৃজনশীল, সংযুক্ত, এবং প্রযুক্তিুদক্ষ। তাদের চাকরির অপেক্ষায় না রেখে, চাকরি সৃষ্টির ক্ষমতায়ন করতে হবে।

তিনি বলেন, তরুণদের জন্য বিনিয়োগ তহবিল ও সামাজিক ব্যবসা তহবিল তৈরি করতে হবে। কৃষিুউদ্ভাবন কেন্দ্র, কৃষিুপ্রযুক্তি, পরিবেশুবান্ধব খাদ্য উৎপাদন ও জলবায়ুুস্মার্ট উদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়তা দিতে হবে। যদি আমরা তরুণদের ওপর বিনিয়োগ করি, তাহলে শুধু পৃথিবীর খাদ্য-নিরাপত্তাই নিশ্চিত হবে না, আমরা পুরো বিশ্বকেই পরিবর্তন করতে পারব, বলেন অধ্যাপক ইউনূস।

বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ হলো ক্ষুধা ও দারিদ্র্যবিরোধী বৈশ্বিক জোটের (গ্লোবাল অ্যালায়েন্স অ্যাগেইনস্ট হাঙ্গার অ্যান্ড পোভার্টি) প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। আমরা এফএও ও জি-২০-এর সঙ্গে মিলিতভাবে প্রযুক্তিগত, আর্থিক ও নৈতিক সহায়তায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

আসুন, আমরা একসঙ্গে কাজ করি— একটি ‘তিন-শূন্য বিশ্ব’ গড়ে তুলতে, প্রধান উপদেষ্টা আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, এই ফোরামের তিনটি ভিত্তি—তরুণ, বিজ্ঞান ও বিনিয়োগ—শুধু স্লোগান নয়, এগুলোই আমাদের খাদ্যব্যবস্থা ও সমাজকে রূপান্তরের মূল হাতিয়ার।

সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আজকের বিশ্বে সম্পদ ও প্রযুক্তি আছে, ভবিষ্যতে আরও অভাবনীয় প্রযুক্তি আসবে। কিন্তু প্রয়োজন এমন সৃজনশীল চিন্তা ও উপযুক্ত ব্যবসায়িক কাঠামো—যার মাধ্যমে আমরা নতুন এক পৃথিবী গড়ে তুলতে পারব। আমরা যদি কল্পনা করতে পারি, তবে আমরা তা বাস্তবায়নও করতে পারব।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x