১৭ জুন ২০২৫ মঙ্গলবার
প্রকাশ : ১৭ জুন ২০২৫, ১২:৩৫ এএম

এ সম্পর্কিত আরও খবর

সিলেটে ট্রেনের টিকিট সংকট, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

প্রকাশ : ১৭ জুন ২০২৫, ১২:৩৫ এএম

👁 12 views

সিলেট অফিস

ধারণ ক্ষমতার প্রায় অর্ধেক বগি নিয়ে খুড়িয়ে চলছে সিলেট রুটের ট্রেনগুলো। সিলেট ঢাকা ও সিলেট চট্টগ্রাম রুটের আন্তঃনগর ট্রেনগুলো চললেও চাহিদা মাফিক মিলছে না পর্যাপ্ত টিকিট। ফলে প্রতি ট্রিপে লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে রেলওয়ের। এ অবস্থায় বগির সংখ্যা বাড়ানোর দাবি যাত্রীদের। সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস কর্তৃপক্ষের। সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে টিকিটের জন্য যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন এখন প্রতিদিনের চিত্র। বাইরে থেকে দেখলে সব কিছু স্বাভাবিক মনে হলেও, ভিতরে রেলের প্রকৃত চিত্র একেবারেই ভিন্ন-বগি সংকটে চলছে আন্তঃনগর ট্রেনগুলো।

পর্যটন নগরী হিসেবে সিলেটের গুরুত্ব দিন দিন বাড়লেও, ট্রেন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন তেমন হয়নি বলেই অভিযোগ যাত্রীদের। ঢাকা ও চট্টগ্রামগামী ছয়টি আন্তঃনগর ট্রেন নিয়মিত চলাচল করলেও, এসব ট্রেনের বগির সংখ্যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। এতে করে সঠিক সময়ে টিকিট না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা।

টিকিট পেতে স্টেশনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন খালি হাতে। কেউ কেউ বলছেন, আগে থেকে অনলাইনে চেষ্টা করেও টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। আবার যারা সাধারণ শ্রেণিতে ভ্রমণ করছেন, তাদের জন্য ট্রেনে ভেতরে জায়গা না থাকায় ঠাসাঠাসি করে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

এ পরিস্থিতিতে দ্রুত রেলের বগি সংখ্যা বৃদ্ধি ও যাত্রীসেবার মান উন্নয়নের দাবি জানিয়েছে সিলেটবাসী। সিলেট রেলস্টেশনে টিকিট না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়া যাত্রী সুমন বলেন, ‘ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও যখন টিকিট মেলে না, তখন বাধ্য হয়ে স্ট্যান্ডিং টিকিট কিনতে হয়। দীর্ঘ যাত্রায় তা কষ্টকর হয়ে ওঠে, বিশেষ করে ছোট শিশুদের সঙ্গে থাকলে ভোগান্তির মাত্রা আরও বাড়ে। একটা সিট খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। তাই দ্রুত বগি সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি-এটাই যাত্রীদের কষ্ট কমানোর একমাত্র উপায়।’

আরেক যাত্রী মামুন বলেন, ‘বাসের তুলনায় দেশে ট্রেনের যাত্রী সংখ্যা অনেক বেশি, কিন্তু সেই অনুযায়ী ট্রেনে বগি নেই। যার ফলে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রতিদিন। তবে আমরা আশাবাদী, রেল খাতে যাঁরা কাজ করছেন, তারা নিশ্চয়ই শিগগিরই এই অবস্থার পরিবর্তন আনবেন। সামনে হয়ত আরও ভালো রেলসেবা পাবো-এই প্রত্যাশা নিয়ে পথচলা।’

বগি সংকটে ক্ষুব্ধ সুমি বেগম বলেন, এই সমস্যা আজকের না, অনেক দিনের। আমরা বারবার অভিযোগ দিয়েছি, কিন্তু সিলেটের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলের রেল খাতকে সবসময়ই উপেক্ষা করা হয়েছে। টিকিটের চাহিদা থাকলেও যথাযথ সেবা মিলছে না। অথচ এখানে রেলের সম্ভাবনা অনেক। দ্রুত বগি বাড়ানো না হলে যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়তেই থাকবে। তাই আমরা চাই-সিলেটের যাত্রী চাহিদা বিবেচনায় দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হোক।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সিলেট সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, রেলওয়ের এমন করুণ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সরকারকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে আমরা যাত্রী হিসেবে অভিভাবকহীন অবস্থায় আছি। একের পর এক সংকটে পড়ে দিন পার করছি। কবে এই অবস্থার পরিবর্তন হবে, সেটাই এখন সময়ের দাবি।

সিলেট রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, নতুন ইঞ্জিনে ২২টি বগি যুক্ত করার সক্ষমতা থাকলেও বর্তমানে ব্যবহার হচ্ছে মাত্র ১৩টি বগি। ফলে প্রতি ট্রিপে যেখানে ৭ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে, সেখানে আয় হচ্ছে মাত্র ৫ লাখ টাকা। এতে প্রতি ট্রিপে রেলওয়ের লোকসান দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ টাকা। তবে ভারতের পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়া থেকেও নতুন বগি সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলছে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে সিলেট অঞ্চলের রেল সংকট অনেকটাই নিরসন হবে।

সিলেট রেলওয়ের স্টেশন ম্যানেজার নুরুল ইসলাম জানান, টিকিটের চাহিদা প্রচুর, কিন্তু বগির স্বল্পতার কারণে আমরা সেই চাহিদা পূরণ করতে পারছি না। এতে একদিকে যেমন যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ছে, অন্যদিকে রাজস্ব ঘাটতির মুখে পড়ছে রেলওয়ে।পর্যাপ্ত বগি যুক্ত করা গেলে এই সংকট কাটিয়ে রাজস্ব আয় দ্বিগুণ করা সম্ভব। সমস্যার সমাধানে ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

উল্লেখ্য, ১৮৯১ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের মাধ্যমে বাংলার পূর্বাঞ্চলে রেলপথ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৯১২ থেকে ১৯১৫ সালের মধ্যে সিলেট রেলস্টেশন চালু হয়, যা আজও দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রেল সংযোগস্থল হিসেবে বিবেচিত।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x